আমের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

আমের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

Size:
Price:

Read more

 

আমের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

আম (Mango) শুধু গ্রীষ্মের ঋতুর একটি জনপ্রিয় ফলই নয়, এটি পুষ্টির দিক থেকেও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। প্রাচীনকাল থেকে বাংলাসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আমকে “ফলের রাজা” হিসেবে ডাকা হয়ে এসেছে। এটি মিষ্টি স্বাদ, রঙিন রূপ এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের কারণে মানুষের খাদ্য তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে। চলুন দেখি, আমের পুষ্টিগুণ এবং এটি আমাদের শরীরের জন্য কীভাবে উপকারী হতে পারে।


আমের পুষ্টিগুণ

আমের মূল পুষ্টিগুণ এর ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সমৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে। ১০০ গ্রাম কাঁচা আমে সাধারণত পাওয়া যায়:

  • ক্যালরি: ৬০ ক্যালরি

  • প্রোটিন: ০.৮ গ্রাম

  • ফ্যাট: ০.৪ গ্রাম

  • কার্বোহাইড্রেট: ১৫ গ্রাম

  • ফাইবার: ১.৬ গ্রাম

  • ভিটামিন সি: ৩৬.৪ মিলিগ্রাম (প্রায় দৈনিক প্রয়োজনের ৬১%)

  • ভিটামিন এ: ৫০৮ IU

  • ভিটামিন ই: ০.৯ মিলিগ্রাম

  • পটাশিয়াম: ১৮২ মিলিগ্রাম

  • ম্যাগনেসিয়াম: ১০ মিলিগ্রাম

এছাড়াও আমে রয়েছে ফোলেট, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং জিঙ্কের traces, যা দেহের বিভিন্ন শারীরিক প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


১. ভিটামিন সি সমৃদ্ধি

আম ভিটামিন সি-এর একটি ভালো উৎস। ভিটামিন সি আমাদের দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি কোষের ক্ষয় রোধ করে এবং ত্বক সুস্থ রাখে। ভিটামিন সি-র antioxidant বৈশিষ্ট্য কোষের oxidative damage কমাতে সহায়ক। নিয়মিত আম খেলে সাধারণ সর্দি, কাশি এবং অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।


২. ভিটামিন এ-র উপস্থিতি

আমে ভিটামিন এ প্রচুর থাকে। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে এবং চোখের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। রেটিনল নামক ভিটামিন এ-এর derivative شبোরসাতে retina-র স্বাস্থ্য বজায় থাকে। এছাড়াও, ভিটামিন এ ত্বকের কোলাজেন তৈরিতে সহায়ক, যা ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখে।


৩. পটাশিয়াম ও হৃদরোগ

আমে যথেষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। পটাশিয়াম ধমনীর সুস্থতা রক্ষা করে এবং হৃৎপিণ্ডের ধ্বনি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রতিদিন কয়েক টুকরা আম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।


৪. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

আমে প্রাকৃতিক ফাইবার আছে, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহায়ক করে। কাঁচা বা পাকা আম খেলে অন্ত্রে খাদ্য সহজে চলাচল করে, কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের সমস্যা কমে। এছাড়াও, আমের মধ্যে থাকা enzymes, যেমন অ্যামাইলেস, খাবারের starch ভাঙতে সাহায্য করে।


৫. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ

আমে polyphenols, flavonoids, এবং carotenoids রয়েছে, যা antioxidant হিসেবে কাজ করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীরের free radicals কমায় এবং কোষের ক্ষয় রোধ করে। ফলে ক্যান্সার, হৃৎরোগ এবং অন্যান্য chronic diseases-এর ঝুঁকি কমে। বিশেষ করে আমে থাকা mangiferin নামে একটি antioxidant ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে বলে গবেষণায় প্রমাণিত।


৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য

যদি আপনি ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, আম একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে। এটি কম ফ্যাটযুক্ত এবং ক্যালরি কম হওয়ার কারণে খাবারের মধ্যে প্রাকৃতিক মিষ্টি যোগ করতে সাহায্য করে। আম খেলে লবণীয় বা প্রসেসড সুইটের পরিবর্তে শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পায়।


৭. ত্বকের যত্ন

আম ত্বকের জন্যও খুব উপকারী। ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং antioxidant উপাদান ত্বককে উজ্জ্বল ও নরম রাখে। নিয়মিত আম খাওয়া এবং আমের face mask ব্যবহার করা ত্বকের শুষ্কতা কমায়, ব্রণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং বার্ধক্যজনিত দাগ কমাতে সহায়ক।


৮. রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণ

যদিও আম মিষ্টি, এটি glycemic index কম হওয়ায় রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। বিশেষ করে হরিতকী বা কাঁচা আমে প্রাকৃতিক সুগার কম এবং ফাইবার বেশি, যা blood sugar level স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। তবে, diabeticsদের moderation প্রয়োজন।


৯. হাড় ও পেশি শক্তিশালী করে

আমে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ক থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। নিয়মিত আম খেলে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে এবং osteoporosis বা হাড়ের দুর্বলতার ঝুঁকি কমে। এছাড়াও, প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেশি গঠন ও শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক।


১০. মানসিক স্বাস্থ্য ও স্মৃতিশক্তি

গবেষণা অনুযায়ী, আমে থাকা ভিটামিন বি6 (pyridoxine) মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি serotonin এবং norepinephrine-এর উৎপাদন বাড়ায়, যা মেজাজ স্থিতিশীল রাখে এবং স্ট্রেস হ্রাস করে। এছাড়াও, mangiferin স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক বলে জানা গেছে।


১১. ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে আম

আম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং antioxidant সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরের immunity শক্তিশালী হয়। সাধারণত, শীতকালে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার সময় আম খেলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।


১২. হজম এবং লিভারের স্বাস্থ্য

আমের enzymes কাঁচা অবস্থায় হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এছাড়াও, আমে থাকা phytonutrients লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং টক্সিন দূর করতে সহায়ক। নিয়মিত আম খেলে লিভারের স্বাস্থ্য বজায় থাকে এবং শরীরের detoxification প্রক্রিয়া সহায়ক হয়।


১৩. চুলের যত্ন

আমে থাকা ভিটামিন এ এবং সি চুলকে পুষ্টি যোগায়। নিয়মিত আম খেলে চুলের বৃদ্ধি বৃদ্ধি পায় এবং চুল পড়া কমে। এছাড়াও, আমের antioxidant চুলের মূলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।


১৪. হজমে সহায়ক এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ

আমে dietary fiber ও antioxidant সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি cholesterol control এবং হজমে সহায়ক। LDL (খারাপ কোলেস্টেরল) কমাতে আম কার্যকর।


১৫. বিভিন্ন ধরণের আম

আম বিভিন্ন প্রজাতির হয়। যেমন: হিমসাগর, লংফা, কেশরী, সন্দেশী, চাষী আম। প্রতিটি প্রজাতির আমের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ভিন্ন, তবে সাধারণত সব প্রজাতির আম ভিটামিন, খনিজ এবং antioxidant সমৃদ্ধ।


১৬. আম খাওয়ার নিয়ম

  • প্রতিদিন ১–২ টুকরা পাকা আম খাওয়া স্বাস্থ্যকর।

  • কাঁচা আম ও পাকা আম দুটোই উপকারী।

  • রোজের খাবারের অংশ হিসেবে বা সরাসরি খাওয়া যায়।

  • Diabetic রোগীরা moderation এবং ডাক্তারের পরামর্শে খাওয়া উচিত।


উপসংহার

আম শুধু মিষ্টি স্বাদ এবং গ্রীষ্মকালীন আনন্দদায়ক ফল নয়। এটি ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং antioxidant সমৃদ্ধ হওয়ায় স্বাস্থ্য রক্ষায় অনেক উপকারী। নিয়মিত আম খেলে ত্বক উজ্জ্বল, হজম ভালো, হৃদপিণ্ড সুস্থ, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়। গ্রীষ্মকালেই প্রাপ্তিশীল ও সুস্বাদু আম খাওয়া শুধু আনন্দ নয়, স্বাস্থ্যকরও।

সুতরাং, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, তবে পরিমাণমতো এবং প্রয়োজনমতো খাওয়া স্বাস্থ্য উপকারিতা নিশ্চিত করবে।

0 Reviews

Contact form

Name

Email *

Message *